মেয়েটি বিপদে

Posted: অগাষ্ট 24, 2010 in Uncategorized

বোদা উপজেলার কাজলদিঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব কালিয়াগঞ্জ (নতুনগঞ্জ) গ্রাম থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ওই গ্রাম থেকে সাইকেলে করে পড়তে যেত দশম শ্রেণীর ছাত্রী আলেমা আকতার তিথি। মাঝপথে আমতলী হাটসংলগ্ন আমতলী হাইস্কুলের মাঠে আড্ডা দিত একদল বখাটে। স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটেরা তিথির উদ্দেশে অশ্লীল কথাবার্তা বলার পাশাপাশি ঢিল ছুড়ে উত্ত্যক্ত করত। সর্বশেষ ১৮ আগস্ট দুপুরে পঞ্চগড় থেকে প্রাইভেট পড়ে বাড়িতে ফেরার পথে বখাটেরা তিথিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে। মাথায় আঘাত পাওয়া তিথি এখন হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। খেতে পারছে না শক্ত কোনো খাবার। চলাফেরা করতে হচ্ছে অন্যের সাহায্য নিয়ে। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিথি গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলে, ‘বড় একটি পাথর মাথার পেছনে আঘাত করার পর প্রচণ্ড ব্যথায় আমি পড়ে যাই। পরে কোনোমতে উঠেআমি দেখি পাঁচ থেকে ছয়জন যুবক মাঠে আড্ডা মারছে। তাদের কাছে গিয়ে পাথর ছোড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রথমে সবাই অস্বীকার করে। এরপর মতিয়ার নামে একজন হুমকি দিয়ে বলে, এই মেয়ে আমি পাথর মেরেছি। তুই আমাকে কী করবি। কিছুই করতে পারবি না।’ তিথি জানায়, প্রচণ্ড ব্যথায় তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। ঘটনাটি বাসায় জানানোর জন্য হাটের লোকজনের সাহায্য চাইলে এক কলেজছাত্র তার মোবাইল ফোনটি এগিয়ে দেয়। কিন্তু শ্যামল নামে আরেক বখাটে ফোনটি কেড়ে নেয় এবং কলেজছাত্রটিকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। হাটের একজন তিথির পক্ষ নিলে তাকে বখাটেরা জুতাপেটা করে। পরে দুজন আত্মীয় তিথির বাসায় খবর দিলে বাবা এসে মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিথি জানায়, এর আগেও বখাটেরা তাকে কাদা ও ঢিল ছুড়ে মেরেছে। স্কুলের প্রিন্সিপালকে একবারবিষয়টি জানানো হলে তিনি দুজন শিক্ষককে ওই এলাকায় পাঠিয়ে বখাটে যুবকদের শাসিয়ে দেন। এ ছাড়া কিছুদিন স্কুলের অফিস সহকারী আমজাদ হোসেন তাকে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে দিতেন। এতে যুবকরা কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও কয়েক দিন ধরে আবার একই ঘটনা ঘটতে থাকে। পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসার পর গত রবিবার তিথিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আবারও সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনা জানতে পেরে সোমবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহাবউদ্দিন তিথিদের বাড়িতে যান। তিনি তাকে আবার সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। রাতে জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক তিথিকে দেখতে হাসপাতালে যান। জেলা প্রশাসক পরিবারকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘ওর কিছুই হবে না, আমরা সবাই ওর পাশে আছি। বখাটেরা কেউ ছাড় পাবে না।’ তিথির মা জহুরা বেগম (৩৮) জানান, বর্তমানে তাঁর মেয়ে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারছে না। শুয়ে থাকলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। শক্ত খাবার খেতে পারে না। তিনি বখাটেদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করে বলেন, ‘এর আগে অনেকবার আমার মেয়ে ওই বখাটে ছেলেদের কথা বলেছে। আমি বলতাম, তুই সোজা যাবি, আবার চলে আসবি। কাউকে কিছু বলবি না। তবু ওরা আমার মেয়েকে ছাড়ল না।’ সোমবার রাতে পুলিশ তিথির বাবাকে বোদা থানায় ডেকে নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করিয়েছে। মামলায় মতিয়ার, শ্যামল, রুবেল, কামরুজ্জামান, মনিরুল, আবু রায়হান, আনারুল, সাদ্দাম নামে আট বখাটেকে আসামি করা হয়েছে। বোদা থানার ওসি কায়সার আলী খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তারা সবাই আত্মগোপন করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিয়ার রহমান পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে যাতায়াতকারী একটি বাসের হেলপার। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক। আরেক আসামি শ্যামল (২৮) অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, ‘আমি কারো মোবাইল কেড়ে নেইনি। ঘটনা অত বড় নয়। ইতিমধ্যে এটা মীমাংসা হয়ে গেছে।’ পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক বাহারাম আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাথরের আঘাতে তিথির মাথার পেছনে নিচের দিকে অনেকটা ফুলে গিয়েছিল। সেটা কমলেও ব্যথা এখনো আছে। ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পাওয়ার পর এখনো সে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংগ্রহ- কালের কন্ঠ ২৫.০৮.১০

মন্তব্য
  1. nobigarny বলেছেন:

    গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি

  2. nobigarny বলেছেন:

    গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি nobigarny

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান