অদম্য মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি আবেদন

Posted: মে 17, 2011 in Uncategorized

প্রতিবছর এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এমন কিছু অদম্য মেধাবীর কথা জানতে পারি যা আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরনা যোগায়। সারা দেশের সংখ্যার তুলনায় পত্রিকায় প্রকাশিত সংখ্যা হয়তো  খুবই নগন্য। তারপরেও, এই সংখ্যা দিয়েই আমরা খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারি সারা দেশের গ্রাম থেকে গ্রামন্তরের অসংখ্য মেধাবীর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে। এ বছর অর্থাৎ ২০১১ এর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পরেও এমনি কিছু সংগ্রামী মেধাবী মূখ সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি পত্রিকার পাতা থেকে। যারা জন্মের পর থেকেই প্রতিটি মূহুর্ত লড়াই করে চলেছে জীবনের সাথে তবু কখনোও হাল ছাড়েনি পড়াশুনার। পিছু হটেনি কেউ, প্রতি মূহুর্তের বেঁচে থাকার লড়াই থেকে। রিক্সা চালিয়ে, দিনমজুরের কাজ করে, ছাত্র পড়িয়ে, নির্মান শ্রমিকের কাজ করে, খালে-বিলে মাছ ধরে, অন্যের বাড়ীতে কাজ করে, বুট-বাদাম বিক্রি করে  কখনো দুবেলা খেয়ে কখনোবা একবেলা আবার কখনোবা না খেয়ে তারা বেঁচে থাকার লড়াই করেছে, চালিয়ে গেছে পড়াশুনা। এতো কিছুর পরেও তারা মনোবল হারায়নি কখনো। আর এই মনোবলের কারনেই এবারের এসএসসিতে তারা পেয়েছে সবাই জিপিএ-৫। ফলাফলে খুশি এই সংগ্রামীরা, খুশি পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং এলাকার মানুষ। ফলাফলে খুশি হলেও আগামী দিনের উচ্চ শিক্ষার খরচের চিন্তায় এখন সকলের চোখে-মূখে হতাশার ছাপ। ওরা কেউ জানে না কিভাবে চলবে আগামী দিনের পড়াশুনার খরচ!

জাকির হোসেনঃ পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার এক অদম্য শিক্ষার্থী জাকির হোসেন। এক বেলা রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে অন্নের সংস্থান, অন্য বেলায় লেখাপড়া করে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে সে। পরীক্ষার ফলে আনন্দিত জাকির শুক্রবার বিকেলে নিজের রিকশায় তার মা মাসুদা বেগমকে ঘোরান। জাকির হোসেন মাসিক ৬০০ টাকায় রিকশা ভাড়া নিয়ে ভান্ডারিয়া শহরে একবেলা রিকশা চালায়, আর অন্যবেলা উপজেলার নদমূলা ইউনিয়নের শিয়ালকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত।

দিলীপ চন্দ্র দাসঃ পটুয়াখালীর বাউফলের পল্লীতে বাবার আর্থিক অনটন দমাতে পারেনি মেধাবী ছাত্র দিলীপ চন্দ্র দাসকে। গরিব বাবা রঙ্গলাল দাস দিনমজুর এবং মা রেণু বালা দাস গৃহিণী। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তান যখন অর্থিক অনটনের কারণে ঝরে পড়লেও মেধাবী দিলীপ মেধার পরিচয় দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। দিলীপ বাবার সঙ্গে কখনও মাঠে, কখনও খালে-বিলে মাছ ধরে পড়াশোনার ব্যয় বহন করত। প্রকৃতির দেওয়া চন্দ্রের আলোই ছিল তার একমাত্র ভরসা। স্কুলের স্যার ও বন্ধুদের বই থেকে নোট লিখে দিলীপ চন্দ্র দাস এবার কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। দিলীপ চন্দ্র দাস একজন অর্থনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

শাহজাহানঃ ছেলের ভালো ফলে মিষ্টিমুখ করাতে না পারলেও বিস্কুট আর চানাচুর খাইয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন জিপিএ-৫ পাওয়া
নীলফামারীর শাহজাহানের মা সায়মেনা খাতুন। শাহজাহানের ইচ্ছা দেশের ভালো কোনো কলেজে লেখাপড়া করে ব্যাংকার হওয়া। মা সায়মেনা খাতুন (৫৫) পারবে কি ছেলের সে স্বপ্ন পূরণ করতে? বৃহস্পতিবার সকালে ফেরি করতে বের হলেও ছেলের সাফল্যের খবরে দুপুরে বাড়িতে ফিরেছেন মা খালি হাতে। আর এসেই দেখেন বাড়িতে পরশীদের ভিড়।
নীলফামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে ২০০৫ সালে ট্যালেন্টপুলে এবং নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে অষ্টম শ্রেণীতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায় সে।

সাজিদুল ইসলামঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সাজিদুল ইসলাম নামে এক নির্মাণ শ্রমিক জিপিএ-৫ পেয়ে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এত ভালো ফল করেও সাজেদুলের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে বসেছে। ভবিষ্যৎ চিন্তায় ভালো ফলের পরও আনন্দের বদলে কান্নায় ভেঙে পড়েছে ওই পরিবারের সদস্যরা। সকালে প্রতিদিনের মতো সাজিদুল তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার নাদোসৈয়দপুর পাটগাড়ী পাড়ায় এক বাড়িতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে ব্যস্ত ছিল। দুপুরে খাবার খেতে বসেছিল বাবা আবু মুসা প্রামাণিক, মা শাহিদা বেগম ও ছোট দুই ভাইকে নিয়ে। খাবার শেষে কথা ছিল আবার কাজে চলে যাওয়ার; কিন্তু এসএসসির ফল প্রকাশের পর জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর পেয়ে ওই পরিবারে কান্নার রোল পড়ে যায়। সাজিদুলের মা ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন। তার কান্না দেখে পরিবারের অন্য সদস্য ও পাড়া-প্রতিবেশীদেরও চোখ ভিজে আসে।

মাইদুল ইসলামঃ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী গ্রামের ফেরি করে বুট-বাদাম বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের ছেলে মাইদুল ইসলাম এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অভাবের সংসারে মাইদুলকেও বাবার সঙ্গে ফেরি করে গ্রাম ঘুরে এবং হাটে-বাজারে বুট-বাদাম বিক্রি করতে হয়েছে। সংসারের অন্যান্য কাজও করতে হয় তাকে। তার মধ্যে আবার প্রতিদিন বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যেতে-আসতে ১৬ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছে। দাদি রফিয়া বেওয়া ফিতরার টাকা এনে বইপত্র-খাতা-কলম কিনে দিয়েছেন। এত প্রতিকূলতার মধ্যে শুধু একাগ্রতা ও অধ্যবসায় দিয়ে মাইদুল অর্জন করেছে এ সাফল্য। মেধাবী মাইদুল ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়।

আবদুল্লাহ আল মামুনঃ রংপুরের বদরগঞ্জে শারীরিক প্রতিবন্ধিত্ব হার মানাতে পারেনি আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তার অদম্য ইচ্ছাই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। সে এবার রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মামুনের বাড়ি উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামে। তার বাবা জাকারিয়া হোসেন দরিদ্র কৃষক। ছেলে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর তিনি অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে হাত দিয়ে প্যাডেল ঘোরানো তিন চাকার একটি সাইকেল কিনে দেন। ওই সাইকেলে চড়ে মামুন স্কুলে যেত। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ভবিষ্যতে আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।

মোজাম্মেল হকঃ পরীক্ষার ফল জানতে অন্য শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার যখন বিদ্যালয়ে ভিড় করছিল, তখন প্রচণ্ড রোদে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় জমিতে ধান কাটছিল মোজাম্মেল হক। পরে মায়ের কাছ থেকে জানতে পারে, গৌরনদীর পিংলাকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মোজাম্মেল চতুর্থ। তার বাবা তিন বছর যাবৎ অসুস্থ। অষ্টম শ্রেণী থেকে মোজাম্মেলকে দিনমজুরের কাজ শুরু করতে হয়।
মোজাম্মেলের আগামী দিনের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত তার মা ও বোন। অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না, তাও নিশ্চিত নয়।

কৃপেশ চন্দ্র দাসঃ কখনো রিকশা চালানো, কখনো দিনমজুরি আবার কখনো বাড়ি বাড়ি ছাত্র পড়াতে হয়েছে কৃপেশ চন্দ্র দাসকে। তবু থামেনি পথচলা। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে কৃপেশ।
বাবা নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস মারা গেছেন ১২ বছর আগে। এরপর তারা চলে আসে সুনামগঞ্জ শহরে। দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। এখন মা, ভাই আর এক বোন মিলে চারজনের সংসার। বড় ভাই নৌকাশ্রমিক, বোন দর্জির কাজ করে। অভাবের কারণে বোনের লেখাপড়া হয়নি।
কৃপেশ বলে, ‘মায়ের স্বপ্ন, আমি অনেক বড় হব। যত কষ্টই হোক, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবই। আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।’

মোরশেদা খাতুনঃ তিন ভাইবোন ও মা-বাবা মিলে মোরশেদা খাতুনদের পাঁচ সদস্যের সংসার। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের খরচ চালাতে ভীষণ হিমশিম খেতে হয় অটোরিকশাচালক বাবা আবদুল মতিনকে। শিক্ষক ও বাবা-মায়ের উৎসাহে দিনাজপুরের পার্বতীপুর খোলাহাটি ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে মোরশেদা।
মোরশেদাদের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আরাজি দিলালপুর গ্রামে। এর আগে সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। মোরশেদা ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। মোরশেদার বাবা আবদুল মতিন জানান, ‘আমি পড়াশোনা করতে পারিনি অর্থাভাবে। প্রতিজ্ঞা করেছি বাচ্চাদের মানুষ করব। কিন্তু ওদের ঠিকমতো খাবারই দিতে পারি না।’

আফরোজা খানম সুমিঃ পাশের বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জ্বলে। অথচ দিনের আলো শেষ হওয়ার পরই বন্ধ হয়ে যেত আফরোজা খানম সুমির পড়া। রাতে মোমবাতি বা কুপি জ্বালিয়ে পড়ার সাধ্য নেই। ভাঙা বেড়া দিয়ে ঘরে শিয়াল ঢোকে, সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলে অন্যের ঘরের বারান্দায় আশ্রয় নিতে হয়। এভাবেই প্রতিকূল পরিবেশে পড়াশোনা করেছে আফরোজা। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাঁচপাড়ায় আফরোজাদের বাড়ি। প্রতিদিন সে হেঁটে ত্রিশাল উপজেলা সদরে নজরুল উচ্চবিদ্যালয়ে যেত।
তার বাবা নাসির উদ্দিন কখনো সংবাদপত্র, কখনো বা পান-সিগারেট বিক্রি করে দুমুঠো খাবার জোগাড় করেন। আফরোজা জানায়, সে পাইলট হতে চায়।
নাসির উদ্দিন জানান, আফরোজা পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে নিজেই নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে। নবম শ্রেণীতে ওঠার পর তার বড় চাচা প্রতি মাসে খরচ দিত ৩০০ টাকা। তা দিয়ে ওর পড়ার খরচ কোনোমতে চলত।

মো. শাহজাহান ইসলামঃ মো. শাহজাহান ইসলাম এবার নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে, অষ্টম শ্রেণীতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায় সে।
শাহজাহান জানায়, তার বাবা মারা গেছেন ১১ বছর আগে। নানার দেওয়া পাঁচ শতাংশ জমির ওপর তাদের বাড়ি। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সে ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ভাই বিয়ে করে পরিবার নিয়ে আছেন। মেজো ভাই বেকার। তারা দুই ভাই মায়ের সঙ্গে থাকে। মা সায়মেনা বাড়ি বাড়ি ফেরি করে শাড়ি-কাপড় বেচেন। যে আয় হয়, তা দিয়ে ঋণের কিস্তি দেন, সংসার চালান। অর্ধাহারে-অনাহারে কাটে তাদের দিন। ‘মা কখনো কাজ করতে দিত না আমায়। তার ইচ্ছা আমি লেখাপড়া করে ব্যাংকের ম্যানেজার হই। মায়ের ইচ্ছাটা পূরণ করতে চাই।’ বলছিল শাহজাহান।

মোস্তাফিজঃ তিন শতক জমির ওপর ছোট একটি টিনের ঘর। সে ঘরেই তিন ভাই, দুই বোন ও বাবা-মাসহ সাতজনের সংসার মোস্তাফিজদের। বাবা মজিবার রহমান (৬৫) বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অন্যের বাড়ি কাজ করে মা মোমেনা বেগম যা পেতেন, তা দিয়ে সংসার চলত না। বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে শ্রম দিতে যেত সবার বড় মোস্তাফিজ। বন্ধুদের দেওয়া পুরোনো জামা গায়ে চড়িয়ে একটুও মন খারাপ হতো না। বহুদিন অভুক্ত থেকে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু জিপিএ-৫ পাওয়ার আনন্দ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সমস্ত কষ্টের গ্লানি।
মোস্তাফিজুর রহমান এবার রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াবাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

নাসিরঃ ‘রইদে পুইড়া, বিষ্টিত ভিজা, ভ্যান চালাইয়া ছাওয়ালডা আমার কাহিল হইয়া যাইত। সারা রাইত জাইগা পইড়ছে। ইস্কুল কামাই করে নাই। হুগুল্লি (সবাই) কইতাছে, নাসির আমার পেলাস (প্লাস) পাইছে।’ কথাগুলো সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এনায়েতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হালিমা খাতুনের। তাঁর ছেলে নাসির উদ্দিন এবার উল্লাপাড়া মার্চেন্টস পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা আবদুস সালামও ভ্যানচালক। নাসিরের একটি ছোট ভাই আছে। আবদুস সালাম জানান, নাসির তিন বছর ধরে ভাড়ায় ভ্যান চালায়। ভোর পাঁচটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত ভ্যান চালিয়ে পরে স্কুলে যেত সে।
অধ্যক্ষ মীর আবদুল হান্নান জানান, নাসির বরাবরই ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতো। ভালো ব্যবহারের জন্য সবাই তাকে ভালোবাসে। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখে নাসির।

গোপাল চন্দ্র পালঃ বাড়িটা পৌরসভার মধ্যে। কিন্তু গোপালদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়ার সামর্থও নেই দিনমজুর বাবার। হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করে এসেছে গোপাল। মা ফুলকুমারী পাল অন্যের বাড়িতে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানানোর কাজ করেন। মায়ের সঙ্গে সেও কাজে হাত লাগায়।
এমন টানাটানির সংসারে জিপিএ-৫ পেয়ে সবার নজর কেড়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার গোপাল চন্দ্র পাল। ভালো ফলের পরও গোপালের মুখে হাসি নেই। কলেজে পড়ার খরচ জোগাবে কোথা থেকে?

আমরা কি পারি না উচ্চ শিক্ষার খরচের নিশ্চয়তা দিয়ে ওদের চোখ-মূখ থেকে হতাশার সেই ছায়া দূর করতে? সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা একটু মূখ তুলে চাইলেই পারেন একজন ছাত্র কিংবা একজন ছাত্রীর পড়াশুনার খরচের দায়িত্ব নেয়ার মধ্যে দিয়ে ওইসব অদম্য মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষার পথ নিশ্চিত করতে। ওরা আমাদের দেশের সম্পদ, ওদের উচ্চ শিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারলে একদিন ওরাও দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখবে।

তাই ওদের হয়ে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আবেদন, প্লিজ আপনাদের হাতটাকে একটু বাড়িয়ে দিন ওইসব অসহায় মেধাবী, দেশের ভবিষ্যত গড়ার কারিগরদের প্রতি। অন্তত একজন করে ছাত্র কিংবা ছাত্রীর পড়াশুনার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিত করুন তাদের ভবিষ্যত উচ্চ শিক্ষার পথ।

তথ্য সুত্রঃ দৈনিক সমকাল ও দৈনিক প্রথম আলো

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান